Monday, May 2, 2016

তেরে বিন লাদেন - চার নাম্বার দেওয়ালের কচকচানি

ভেবেছিলাম এইবারে আনুরাগ দিবাকরের পোদ চাটাচাটি নিয়ে লিখবো, কিন্তু মাঝে একটা সিনেমা দেখে ফেললাম। "তেরে বিন লাদেন - ডেড অর অ্যালাইভ"। এমনিতেই আগের বইটা আমার খুবই ভাল্লেগেছিলো। তাই একটা ইন্টারেস্ট তো অলরেডি ছিলোই। দেখা হচ্ছিলো না দুটো কারণে - এক নাম্বার হল কাস্টিং নিয়ে স্নবারি। আমরা যারা চারটে শ্রীজিৎ আর তিনটে নোলান দেখে নিজদের রজার এবার্টের ঠাকুর্দা ভাবা শুরু করে দিয়েছি, তাদের এই একটা ব্যাপার আছে। আমরা বড় মুখ করে বলি যে "স্টারের জন্যে না, আমরা সিনেমা যাই অভিনয় দেখতে" তাদেরও কিন্তু একটা ধরাবাঁধা ফর্মাট আছে। সলমন খান বা সানি লিওনের সিনেমা যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না আমরা। আর কঙ্গণাকে ডিচ করেছে বলে ঋত্বিককেও বয়কট করেছি (অবশ্য ঋত্বিককে নিয়ে নাকউঁচু হওয়ার আরো কারণ হলো একে দেখতে দারুণ, সিক্স/সেক্স প্যাক আছে, অসম্ভব সব রোম্যান্টিক হিট দিয়েছে আর বাবার ফ্যাক্টরিতেই কাজ করে)। তো সেই মানসিকতারই ফসল হলো যে যখন আলি জাফরের (পাকিস্তানি বলে একটু গ্রেস পাবেন) বদলে মণীশ পালকে নিয়ে সিনেমাটা হচ্ছে, সেটা খারাপতর হতে বাধ্য। দ্বিতীয় কারণ, সবাই জানেন, নেটে ভালো প্রিন্ট পাওয়া যাচ্ছিল না। তো গত শুক্রবার যখন দেখলাম মোটামুটি একটা কপি ইউটিউবে ছেড়েছে, দেখলাম যে কি কনসেপ্টে বানিয়েছে রে বাঁড়া। আমাদের দেশে এইরকম দেখিনি আগে। এখানে দেখালো "তেরে বিন লাদেন"এর ডিরেক্টরের গল্প, কীভাবে সে নুরের অভিনেতাকে খুঁজে পায়, এবং ইনভেস্টার জোগাড় করে একটি কাল্ট বানায় (তবে আসল গল্পটা অন্য জিনিস নিয়ে - সেটা হল ফার্স্ট পার্টের পরের গল্প)। তার মানেটা কী দাঁড়ালো, যে প্রথমটা আসলে ঘটেইনি - সেই ফোর্থ ওয়ালের তত্ত্ব। এখন ব্যাপার হলো, আমি যখন "মরুতীর্থ হিংলাজ"এর চরিত্রকে দিয়ে "মন ডোলে" গাওয়াচ্ছি আর আরেকটি ক্যারেক্টার সেই ব্যাপারটাকে নিয়ে ভুরু কোঁচকাচ্ছেন, তার অর্থ এই যে আমি বলে দিচ্ছি "নাগিন" একটা স্টোরি মাত্র। এবং সেটা এই পৌনে দুশো বছরের সিনে-ইতিহাসে অজস্রবার হয়েছে যখন একটা সিনেমায় আগের (বা আপকামিং) ছবিটার গান লোকের মুখে বসিয়ে বা সিন স্পুফ করে সেটার অস্তিত্বটাকেই (মানে সিনেমার অস্তিত্ব না, ঘটনাটার বাস্তবিকতার অস্তিত্ত্ব) অস্বীকার করছি। মৃণাল সেন তো "ইন্টারভিউ"তে দেখিয়েছিল কেমন করে "পথের পাঁচালী"র অভিনেত্রীকে নিয়ে এই সিনেমায় ব্যাবহার করা হয়েছে। "বিপ্লবীদের দঙ্গলে"র কার্নিভালেই একটা লোককে অ্যাস্টেরিক্সের মুখোশ পরে দেখা গেছিলো।

কিন্তু এখানে ব্যাপার অন্য - একই ফ্র্যাঞ্চাইজির একটা পার্টে অন্যটাকে কল্পনা বলে নস্যাৎ করা যায় কি?! ধরুন, সিভিল ওয়ারে যদি দেখায় সবাই "অ্যাভেঞ্জার"এর শুটিংএর সময়ে জোস হুইডনের কাছে কেমন বকাঝকা খেয়েছিলো, বা "বকুল কথা"তে যদি লেখা থাকতো বকুল একটা সেমিনারে গেছে যেখানে আশাপুর্ণা দেবী বলছে কোথা থেকে "সুবর্ণলতা"র চরিত্রগুলোকে খুঁজে পাওয়া গেছিলো - তাহলে চতুর্থ দেওয়াল ভাঙতে ভাঙতে কেমন মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম হয়। দেশে তো মনে পড়ছে না বললাম, বিদেশেও খুব একটা আন্দাজ নেই আমার। লাস্ট দুয়েকটা বছরের মধ্যে একটাই মনে পড়ছে - "দ্য হিউম্যান সেন্টিপিড"। সেখানে সিকুয়েলে, সিকুয়েল বলাটা ঠিক হলো কিনা জানি না, দেখাচ্ছে একটা লোক প্রথমটা দেখে এতো ফিদা যে ওই কান্ডটা ঘটানোর জন্য প্ল্যান করছে। "ডেড অর অ্যালাইভ"এ অবশ্য আরো অনেক কায়দা আছে। যেমন, দুটো বইতেই পীযুশ মিশ্র দুটো আলাদা আলদা চরিত্র করেছেন যেটা খানিকটা হলেও গল্পের চালিকা শক্তি। বাকি সবগুলো রোলকে দিয়ে দেওয়াল ভাঙ্গা হলেও এনার ক্যারেক্টারটা কিন্তু একদম ইন্ট্যাক্ট রয়েছে। শুধু এক জায়গায় পীযূষের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে "এই তো একজন সিনিয়ার অ্যাক্টর পাওয়া গেলো"। তবে এটা অনেকটা রেফেরেন্স টানার মত - যেটা "মুন্নাভাই" সিরিজে প্রচণ্ডভাবে আর "গোলমাল"এ টুকরোটাকরা পাওয়া যায়। বা "ব্লাড এন্ড কর্নেটো" সিরিজের গল্পগুলোতেও। রিসেন্টলি যে "হাউসফুল ৩"এর ট্রেলার বেরিয়েছে তাতে অভিষেক বচ্চনের রোলটাকে বলা হচ্ছে বাকি দুজন (অক্ষয় আর রীতেশ) তো আগেই ঢুকে গেছে, এইবারে তোমার এন্ট্রি হলো। এগুলো তাও এই অল্পবুদ্ধির ক্যাপাসিটিতে নেওয়া যায়। কিন্তু ওই যে একই কন্টিনিউয়েশনে দেওয়াল ভাঙ্গার ব্যাপারটা, চতুর্থ মাত্রার মতই, বস ঠিক নিতে পারছি না। আমি বলছি না যে করা যাবে না, কিন্তু জাস্ট ভাবুন, এরপরে হয়তো "তেরে বিন"এর ট্রিলজি বানানোর জন্যে কেউ উঠে পড়ে লাগলো এই ভেবে যে নেক্সট ছবিটায় দেখাবে "ডেড অর অ্যালাইভ"এর সময়ে প্রযোজিকাদের কেমন টেনশন গেছিলো। তাহলে তো সেই "ডেডপুল"এ যেমন বলেছিল না, চারি চারে ষোলো নাম্বার দেওয়াল ভাঙার বন্দোবস্ত করতে হবে।

এইটা নিয়ে রুমমেটের সাথে কথা বলছিলাম, তো সে বললো, "এই তো সেদিন তুই বললি নাকি আর্টিস্টদের যা ইচ্ছে তাই করবে, তা সিকোয়েল হলেই তাকে কন্টিনিউ করতে হবে মূল কাহিনীকে তার কি মানে আছে"। আমি কোঁত করে ঢোঁক গিলে নিলাম কারণ এটা একেবারে ঠিক কথা। আর কথা বাড়াইনি, ভাবছি আরেকটু পড়েটড়ে (ওই গুগল আরকি) এবার সিনেমার সিরিজ নিয়ে একটু শো অফ করে জ্ঞান দিতে হবে। দেখতে হবে "জন্নত" আর "জন্নত ২" এর মধ্যে ইমরান হাশমি ছাড়া কি সুতো আছে যার জন্যে এটা একই ব্যানারে/টাইটেল ফ্রেমে ছাড়া হয়?! তবে ভাগ্যেস কথা "হাউসফুল ৩"র ট্রেলারে ওই সো-কলড "ফালতু" ইয়ার্কি ছাড়াও আরো কিছু ছিলো যেটা আমার ঘ্যাম লেগেছে - দেখুন সেটা সবারই দারুন/রদ্দি লাগে কিনা



~এবারে বই কেমন হল/ছিল সেটা~

পার্ট ১ :- ধুর অত ডিটেলে মনে আছে নাকি, সেই কবে দেখেছি। শুধু একটা জিনিস দারুণ লেগেছিলো যে ওই ইন্দো-পাক বন্ধুত্ব/বৈরিতা নিয়ে বেশী চোদানো হয়নি। আর সত্যি বলতে আলী জাফর তখন আমাদের দেশে সেই অর্থে স্টার ছিলো না, তো পুরো একটা আনকোরা নাট্যগোষ্ঠী দিয়ে একটা কাল্ট ফলোয়িং তৈরি করার জন্যে ঠিকঠাক ম্যাটেরিয়াল যা লাগতো সবই সিনেমাটায় ছিলো। গানটান বাদ দিয়ে একেবারে কমল স্বরুপ হতে চায়নি - আর পুরো বইটা জুড়ে বেশ যাকে বলে "নির্মল আনন্দ" থীম ছিলো।
পার্ট ২ :- আঁতেলদের কথা বাসী হলে ফলে যায়। মণীশ পাল বেশ শক্ত করে দাঁড় করালেও আর একটা জব্বর ভিলেন (এটা বেশ ভালো হয়েছে কারণ এইরকম টিপিক্যাল ভিলেনরা বলিউড থেকে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছেন "মর্দানি" টাইপের খলনায়কদের জন্যে) থাকতেও বাকিটা অতটা ভালো হয়নি। এক তো প্রতিটা বইতে সিপিয়েমের মত আমেরিকা-বিরোধিতা করাটা* একটা ট্রেন্ড হয়ে যাচ্ছে। দুই, ওই সুগন্ধা-রাহুল-চিরাগদের যে গ্রুপটা, তাদের অভিনয়ের খামতি। এম্নিতে রাহুল সিংহ বেশ ভালো অ্যাক্টর কিন্তু এখানে পুরো ক্যালানে লেগেছে। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা পীযুষের অতি-অভিনয়। ভদ্রলোক দারুণ অভিনয় জানেন মানছি, কিন্তু প্রত্যেকটা বইতে ওই যে ম্যানারিজম দিয়ে ছড়িয়ে ফেলেন - তার জন্যে "গুলাল"এর অনুরাগ দায়ী হলেও তাকে সামলানোর জন্যে "গ্যাংস"এর ছড়ি হাতে অনুরাগের দরকার।

_______________________________________
* সেটা অবশ্য আমার অনসাইটে আসার পরে এইসব পুঁজিবাদী শিক্ষার ফল