Friday, June 10, 2016

এক্স-মেনঃ অ্যাপোক্যালিপ্স - কথা দিচ্ছি এর পরের ব্লগে ট্র্যাকে ফিরবো

আগের বার যেটা বলেছিলাম সেটার লিস্ট প্রায় তৈরি করে ফেলেছি। মাঝে কয়েকদিন অফিসে খুব ঠাপ গেছে তাই বাড়িতে ফিরে ল্যাদ ছেড়ে কিছু লেখা হচ্ছিলো না। কিন্তু একটা সিনেমার গরম গরম রিভিউ না করে ঠিক শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না। সেটা হল, এক্স-মেনের নতুনটা। এটা আরো কেন প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে - কারণ হত পোস্টে যে ব্যাপারটা নিয়ে চোদাচ্ছিলাম, সেটার সাথে অনেকটা মিল আছে এটায়। ঠিক করে বলতে গেলে আসলে আগেরটা "ডেজ অফ দ্য ফিউচার পাস্ট"এ সেই ব্যাপারটা করা হয়েছিল। কি ব্যাপার, না "ডেড অর অ্যালাইভ"এ দেখানো হল যে আগের গল্পটা অবাস্তব, আর "ফিউচার পাস্ট" এ আগের পার্টের ঘটনা গুলো যে হয়নি/হবেই না, সেই ব্যাপারটা কন্ট্রোল করা হল। জানি এটা ঠিক করে লিখতে পারলুম না। আসলে আমাদের ভাষা/ভাবনা এতটাই কাল-ওরিয়েন্টেড, যে খুব কম কথায় টাইম ট্রাভেল ব্যাপারটা বোঝানো শুধু কবিদের সাধ্য। তাও আরেকবার চেষ্টা করে দেখি। "ফিউচার পাস্ট" আসলে একটা প্রিকোয়েল যেখানে অতীতে গিয়ে টিয়ে পুরনো এক্স-মেন সিরিজের স্থান-পাত্রের প্রচুর পরিবর্তন করা হয়। সেদিক থেকে ধরতে গেলে এটাকে ঠিক প্রিকোয়েলও বলা যাবে না। অথবা যাবে, সেই "শিল্পীর স্বাধীনতা" কচকচানি টা টানলে। মানে হয়তো লোগান অত আগে আগে প্রোঃ এক্সের কাছে আসবেই না, বা ভিক্টর হয়তো ম্যাগ্নেটোর সাথে দেখাই করলো না। তো এই ক্ষেত্রেও তো তাই হল না?! যে পরের (পরের বলতে আমি পরে রিলিজ পাওয়া বোঝাচ্ছি) ছবিতে আগের (একই অর্থে) ছবির বাস্তবতা শেষ করা হল। হয়নি মানে সিনেমাটারও থাকার কথা না। এবারে তো শুধু এইটা দেখানোর অপেক্ষা যে ব্রায়ান সিঙ্গার সেই Y2K উষালগ্নে গিয়ে নতুন ভাবে ভাবা শুরু করছেন। হ্যাঁ, তাও হতে পারে, ওই যে বললাম, শিল্পীর স্বাধীনতা। গাই পিয়ার্স অভিনীত "দ্য টাইম মেশিন"এ কালযাত্রার মধ্যে মধ্যে আরো অনেক ঘটনার মধ্যে এটাও দেখিয়েছিলো যে এইচ জি ওয়েলস গল্পটা লিখছেন, আর ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে সেটা নিয়ে সিনেমাও বানানো হচ্ছে।

তো "ফিউচার পাস্ট"এ যেসব দুরূহ কাজগুলো করা হয়েছিলো, সেগুলো এফেক্টিভ হওয়া শুরু করলো "অ্যাপোক্যালিপ্স"এ। উদাঃ ময়রার বিয়ে ও বাচ্চা, কুইকসিলভারের স্মৃতিভ্রম (?!) ইত্যাদি। জানি দিনে দিনে আরো এক্স-মেন আসবে, প্রথম তিনটের রিমেক তো আর সম্ভব না, রিবুট হবে। অ্যাকচুয়ালি রিবুট ও না, কন্টিনিউয়েশান। সেটা বিস্তারিত বলার জন্যে অবশ্য পরের ব্লগটা আছে। আর আছে কর্নেল স্ট্রাইকার। বাপরে বাপ, এই একজনই কমন ভিলেন আছেন এক্স-মেন সিরিজে। এনাকে যেভাবে বার বার, নানা রূপে এক একটা বইতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, সেটা হিসেব করে দেখলে শার্লক হোমস বা আমাদের ভারতীয় সিরিয়ালে বাবা/দাদা/প্রেমিক/মাসশাশুড়ী/খাঁচাগাড়ীওয়ালার প্রত্যাবর্তনের সাথে আলোচনার দাবী রাখে*। এনার অবস্থা হয়ে গেছে শিশুপালের মত, মোটামুটি একশোবার মিউট্যান্টদের পোদ মারার চেষ্টা না করে নাশ হবে না। এবার তো ভেবেছিলাম যে ইনি আর ফিরবেনই না। আমি সিরিয়াসলি ভেবে পাইনা একটা মানুষের জীবনের দাবীটা এরকম হয় কী করে, মানে যতই রিবুট/রিমেক হোক, সেই দেখি তিনি সেই সরকারের জন্যে মিঃ শেল্ভাঙ্কারের মতো সুগন্ধী গাছড়া (মানে, মিউট্যান্ট) খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এখন তো এইসব সিরিজ ফিল্মে একটা ব্যাপার খুব হয় যাকে কাগজে লেখা হয় "প্রোটাগনিস্ট অ্যান্টাগনিস্ট রিভিজিটিং"। মানে হেক্টর বারবোসা বা টেরি বেনেডিক্ট আজকে ভিলেন তো কি হয়েছে, পরের সিনেমাটায় সে ভালোদের দলে ঢুকে যেতেই পারে। বা উল্টোটা যেমন দেখা গেছিলো "স" সিরিজে। সেরকম কি স্ট্রাইকার বাবুর জন্যে করা যাবে না অদূর ভবিষ্যতে?!

তবে এক্স-মেনের প্রসঙ্গটা শুধু টাইমলাইন, শিল্পীর স্বাধীনতা বা "অ্যাপোক্যালিপ্স"এর রিভিয় কেখার জন্যে পাড়ি নি। মুভি সিরিজ জিনিসটা এমনিতেই আমার খুব ভাল্লাগে, তার উপরে এক্স-মেন আরেকটা ব্যাপারে প্রায় কমার্শিয়াল সিনেমার পথিকৃৎ। সেটা হল পুরো ফ্যামিলিটাকেই হিরো করে গল্প এগোনো। "শোলে" বা "ত্রি-" সিরিজের মত বইগুলোতে কিন্তু দুজন/তিনজন/চারজন (+) আলাদা হিরো এবং তাদের যথেষ্ট ক্যারেক্টার সিমেট্রি আছে। স্করসেসের গল্পে গোষ্ঠী দেখানো হলেও একজন পিভটাল চরিত্র (ডি নিরো/ডি ক্যাপ্রিও) থাকবে। রোল্যান্ড এমেরিখের ছবিতে আলাদা লোকজনের রোল থাকে বটে, কিন্তু তারা কোনোভাবেই পরিবার নয়। উল্ভারিনের স্ট্যান্ডালোনগুলো বাদ দিলে, এক্স-মেন কিন্তু সেই জিনিসটা নিয়ে চলেছে। "কাঞ্চনজঙ্ঘা"র পরে খুব একটা বেশী সিনেমায় কিন্তু এটা পাওয়া যায়না। আরেকটা ব্যাপার হল, ওই গ্রুপ গ্যাদারিং এর কনসেপ্ট। যেটা ভাঙিয়ে মার্ভেল লাল হয়ে গেলো, আর ডিসিও সেই জিনিস শুরু করে দিয়েছে এই বছরে। মাঝে অবশ্য খুব মনে হয়েছিলো এই এতো রি-রি-রিবুট কী ভালো হচ্ছে। তবে দেখা যাচ্ছে, চিন্তা নেই, গল্প ভালোই এগোচ্ছে। হিউ জ্যাকম্যান যে এখনো ছাড়েনি, সেটাও আমাদের কম পাওনা না। খালি ভয় যে ডিজনির সাথে আবার মার্জ না করে যায়। ডেডপুল/স্পাইডারম্যান এই ব্যাপারটাতে কোনো মধ্যস্ততা করে কিনা দেখার জন্যে আমি  তে দেখছিলাম কোনো স্পুফ বানিয়েছে কিনা, দেখলাম ওরা বলছে ফ্যানদের আইডিয়াও সাদরে গৃহীত হইবে



~এবারে বই কেমন হল সেটা~

প্রথম কথা বলে নি, আমি এইসব ব্যাপারে খানিকটা বিশুদ্ধবাদী আর একটাও কমিক্স পড়ি নি। যখন হিথ লেজারকে নিয়ে জোকারের কাস্টিং অ্যানাউন্স করা হয়েছিলো, আমি অর্কুটে খুব চিল্লিয়েছিলাম "এ কী সর্বনাশ হল" বলে। তো নতুন স্টর্মকে তো একদম পোষায়নি। জিন গ্রে কেও না। তারপরে আবার বিস্ট আর হ্যাভকের সাথে চার্লস ফালতু ইয়ার্কি মারছে, এটা প্যাট্রিক স্টুয়ার্টের সময়ে ভাবাই যেতো না। এল সাবাহ নুরের রিক্রুটমেন্টও খুব কনভেনিয়েন্ট মনে হয়। ওনার ক্যারেক্টার পোস্টারটা অত "অরণ্যদেব"/"হ্যাম্লেট" মার্কা দেখে একটু বিদিক হয়েছিলাম। আর, ওই এক্স-ম্যানশান ধ্বংস হওয়াটাও আরেকটু ডার্ক (গণসমাধি) করে দেখালে ভালো হত। ম্যাগ্নেটোর বউ-বাচ্চা মরার থেকে কারখানায় যেতে এতক্ষণ লাগলো কেন সেটাও বোঝা যায়না। কিন্তু এত্তসব খোঁচাখুঁচির পরেও দুটো জিনিস অসাধারণ দেখানো হয়েছে বলে আমার মনে হয়

  ১। ওই যে "প্রোটাগনিস্ট অ্যান্টাগনিস্ট রিভিজিটিং" বলা হল না, এখানে সেটাও অতিক্রম করা হয়েছে। এক্স-মেন কেউ প্রথম থেকে দেখলে ভিলেন সম্পর্কে সাদা-কালো ব্যাপারটা ধারণাটা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। শুরু হল ম্যাগ্নেটো-প্রোঃ এক্স এর দ্বন্দ্ব দিয়ে, তারপরে সরকার কে ভিলেন করা হল, পরে বলা হল না গড়পড়তা মানুষই চুতিয়া। লাস্ট ফিল্মে বলা হল প্রান্তিক মানুষরাই কুবুদ্ধির জাসু, আর এখানে আবার আরেকজন মিউট্যান্টকেই ফিরিয়ে আনা হল খলনায়ক হিসেবে। দারুণ সার্কেল, যদিও জানি, বৃত্ত শেষ হতে ঢের দেরী।
 ২। এল সাবাহ নুরের কমপ্লেক্সটা ভাবুন, একদিকে সে বলছে যে "মূর্খ মিউট্যান্ট, দরিদ্র মিউট্যান্ট, ব্রাহ্মন মিউট্যান্ট, চণ্ডাল মিউট্যান্ট আমার সন্তান", আর ভাবছে বাকি সবাইকে গুড়িয়ে দেওয়া হোক। আসলে সে মিউট্যান্ট ব্যাপারটাকে কে ঈশ্বরের সাথে গুলিয়ে ফেলছে। কারণ সে বিংশ শতাব্দীর মানুষ না, সে এসেছে তার সে প্রাচীন দিনের জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে। এটাও চমৎকারভাবে দেখিয়েছে বইতে।

____________________
*ফেলুদার ফেরার ধারে কাছে অবশ্য কেউ আসতে পারবে না। সেই সভা-সেমিনার করে লজ্জার মাথা খেয়ে আবীরকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে আবার সেই দাঁত পড়া/ ভুঁড়ি বেরোনো সব্যসাচীই আবার ফেলুদা করছেন। সন্দীপ রায়ের এত পুলক থাকে কী করে এখনও