Sunday, February 2, 2020

"সংবাদ প্রতিদিন শতাব্দীর সেরা ৫"//"Best 5 Bengali Films For 100 Years" [November 15th, 2018/REpublish]

যেটা তরুণবাবু ওনার মন্তব্যে বলেছেন অলরেডি, বাংলা বই গুলো সব এত এত প্রিয় যে বেস্ট ফাইভ বানাতে বেশ বেগ পেতে হলো। একটা লিস্ট তো চোখ বুঝে বলে দেয়া যায়, মোটামুটি ডিরেক্টরদের ভিত্তিতে  - 'পথের পাঁচালী' (বা পুরো অপু সিরিজটাই), 'আকালের সন্ধানে', 'যুক্তি তক্কো আর গপ্পো', 'গল্প হলেও সত্যি' আর 'উৎসব'। এসব নিয়ে দ্বিমত না থাকলেও লিস্ট আরো লম্বা হওয়ার কথা। তাই ধরা যাক, বাংলায় সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিক, তপন আর ঋতুপর্ণ এইগুলো কিছু বানান-ই নি, তাহলে আমার মতে সেরা পাঁচ হবে এই রকম :

পাতালঘর
আমার দেখা সেরা বাংলা বই। অনেকে টেকনিকাল ভুলত্রুটি নিয়ে মাতামাতি করেন কিন্তু এই ফিল্ম কয়েকটা ব্যাপারে তখনকার সমস্ত সিনেমার থেকে এগিয়ে ছিল। প্রথমত, আসল গল্প থেকে যে চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে, তার কোনো তুলনা নেই। এমনকী, এই এডাপটেশন মনে হয় সত্যজিতের থেকেও ভালো ছিল। দ্বিতীয়ত, ২০০৩ বা ২০০৪ সালে আমি টিম বার্টন এর নাম  শুনিনি; পাতালঘর চিনিয়েছিলো গথিক বলতে কি বোঝায়। তৃতীয়ত, কাস্টিং - এটা ঠিক আঁসাঁব্ল না হলেও প্রত্যেকটা চরিত্র, ভালো বা ভিলেন, যত্ন করে বানানো হয়েছিলো। চতুর্থত, সংগীত যা একাধিক সেমিনার দাবী করে। দেবজ্যোতি মিশ্র, এই বইটার নির্দেশকের মতোই নিজের পোটেনশিয়াল অনুসারে বলতে গেলে কিছুই পাননি আমাদের থেকে। আর সর্বশেষে, সেই লেভেলের হাস্যরস যা শীর্ষেন্দুর লেখাতে ভালো খারাপ নির্বিশেষে সব চরিত্রের উপরে সমানভাবে বন্টিত, এখানে আমাদের পরিচালক তার যথার্থ উদযাপন করেছেন।
কোনি
আমাদের দেশে স্পোর্টস-মুভি নেই বললেই চলে। আজকাল টুকটাক কিছু লোক বানাচ্ছে বটে কিন্তু দেখবেন তেমন ভালো কিছুই নেই। কোনি কিন্তু বাংলার প্রথম বা শেষ স্পোর্টস-মুভি নয়। এমনকী এই বইটা বাংলার সাধের ফুটবল, বা হকি, বা কাবাডি নিয়ে নয়। এমন একটা খেলা, যাতে অদূর অতীতে  ভবিষ্যতে, আমাদের কোনো আন্তর্জাতিক মেডেল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তদুপরি আছে পার্সপেক্টিভ এর কনসেপ্ট। এই সিনেমাটা যতটা না কনকচাঁপার, ততটা তো ক্ষিতিশের- বটে। এই সেই সিনেমা যেখানে তৎকালীন নাম্বার ওয়ান বা নাম্বার টু হিরো, খেলোয়াড় না করে কোচের রোল করছে কিন্তু সেটা নিয়ে এমন কিছু লাফালাফি হয়নি আজ পর্যন্ত। এবার আসল কথা বলা যাক। এই বইটা আমার মায়েরও খুব ফেভারিট মনে হয়। কারণ বারবার এটা দেখতে বলতো, যদ্দুর সম্ভব ইনস্পিরেশন ফুয়েল টুয়েল দিতে। ওই যে জুপিটার, অ্যাপোলো আর মাদ্রাসের কম্পিটিশনে শয়ে শয়ে সুইমসুট পরিহিত টিনেজার্স, ওই সব অবাধে, ঘরে বসেই দেখার সুবিধা হয়েছিল এই বইটার দৌলতে।
হারবার্ট
এরকম  যে হতে পারে, আমাদের কোনো আইডিয়া ছিল না। আজকাল নতুন ট্রেন্ড হয়েছে, নর্থ কলকাতার নস্টালজিয়া। এই বইতে সেটা, আদিখ্যেতা না করেই, যেভাবে দেখিয়েছিলো, তাকে কুল না বলে উপায় নেই। তার উপরে, অভিনেতারা স্ক্র্রিন পুরো মাতিয়ে রেখেছেন - সব্যসাচী, ব্রাত্য, দেবশঙ্কর, বিমল, জয়রাজ, লিলি, এমনকী সুমন (:D) হারবার্টের পাড়ার বন্ধু আর যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যদের রোলগুলো যারা করেছিলো, প্রত্যেকে একটা পুরো সিনেমা টেনে নিতে পারে। শুভাশিসের নামটা ইচ্ছে করেই বললাম না কারণ, সেটা আরো দুটো লাইন দাবী করে। এই ভদ্রলোককে আমরা শিল্পান্তর (তখনও দেখিনি) বাদে সারাজীবন জনি লিভারের বাংলা ভার্সন করতে দেখেছি, সেইখান থেকে হারবার্ট তো নিঃসন্দেহে বিশাল একটা উত্তরণ। তা ছাড়া, এই যে নায়কের যে চরিত্র, সেটা কী, না একটা লোক যে ভূত নামায়। সিনেমায়, বা তথাকথিত বাকি পাঁচটা শিল্পমাধ্যমে, যুক্তি বা উদারনীতিকে মোটের উপর পজিটিভ ভাবেই পেশ করা হয়। এখানে দেখবেন, যুক্তিবাদী সমিতিই খলনায়ক। অনেকে বলবেন নবারুণ এর লেখাটাও একটা জবরদস্ত রাজনৈতিক টেক্সট, কিন্তু এই যে নন-লিনিয়ার নাট্যরূপ দিয়েছিলেন সুমন, তার ক্রেডিট কিন্তু ৫০% আমার মনে আছে, কয়েক জন আঁতেল বন্ধু বলেছিলো, "বইটা না পড়া থাকলে ফিল্মটা আদ্ধেক বুঝতাম না
সাড়ে চুয়াত্তর
বেশি কিছু চেঞ্জ না করে এই গল্পটা নিয়ে আজও প্রিয়দর্শন বা সেথ রোগেন বা মৈনাক ভৌমিক একটা দুর্দান্ত ফিল্ম বানিয়ে ফেলবেন। কথাটা বলছি কারণ কিছু বোদ্ধা আর্টের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে খুব বাতেলা মারেন। আর কিছু বাতেলাবাজ 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' কে প্রথম ফিল্ম বলেন যেখানে একটা পুরো ফ্যামিলিকে হিরো রাখা হয়েছে। কিন্তু নির্মল দের ফিল্মোগ্রাফি দেখলে বোঝা যায় যে উনি এই থিমটাকে কোথায় নিয়ে গেছিলেন, যার সর্বশ্রেষ্ঠ এক্সেকিউশন ছিলো 'সাড়ে চুয়াত্তর'এ। এই বইটায় আরো কত গুলো আধুনিক উপাদান আছে যা দেখলে ঘাবড়ে যেতে হয়। যেমন ওই 'আমার  যৌবন' গানটায় যে অসাধারণ ক্যামিওগুলো, দেখে মনে হয় এটা ১৯৫৫-এর আগে বানানো?! একটা পয়েন্ট তো সর্বদা জ্বলজ্বল করবে "বাংলা  বাঙালীদের মননে" - উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের প্রথম বই এটা। তুলসী চক্রবর্তী আর মলিনা দেবী এই ফিল্মের টপ-বিল্ড স্টারকাস্ট ছিলেন, তার  তো কোনো তুলনা হয়না। আর সেই মেস, কাকে ছেড়ে কার কথা বলি; সবাইকে এখন লোকে পারলে পুজো করে। সিনে-মা, কী ছিলেন, আর..
বেদের মেয়ে জোসনা
এইটা ঠিক আমার খুব প্রিয় সিনেমা না, কিন্তু যাকে বলে ফেনোমেনাল, সেই ব্যাপার। খুব সাধারণ গরীব/বড়োলোক এর ক্লাশ  প্রেমকাহিনী। আমরা তো আত্ম-বিস্মৃত জাতি, তাই কোনো আর্কাইভ  নেই, নাহলে সঠিক জানা যেত এটা সত্যি সত্যি সর্বকালের সেরা হায়েস্ট-গ্রসিং বাংলা বই কিনা। তারপরে একটু পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকারও দায় বর্তায়। বাংলাদেশের সিনেমা সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ফান্ডা নেই, কিন্তু যখন বলা হচ্ছে একশো বছর, কিন্তু আসলে তো তখন আলাদা আলাদা ছিলো না। তাই একটা এন্ট্রি ফ্রম ওই পার। হয়তো 'ঘুড্ডি', 'পদ্মানদীর মাঝি', 'মাটির ময়না', 'সূর্য দীঘল বাড়ি' বা 'ফার্স্ট পারসন..' বললে একটু কেত হতো, কিন্তু এই বইটা সেই জাতির জন্যে যারা নিজেদের জন্ম-আর্টিস্ট মনে করে করে এই ফিল্মটাকে পাত্তাই দিলো না। একদিন হবে দেখবেন, মার্টিন স্কোর্সেসের একটা টীম এটার ডিজিটাল রিস্টোরেশন করবে।

__________
*# এই জিনিসটা একটা প্রতিযোগিতার জন্যে লেখা। প্রিডিফাইন্ড ফ্যাভ-লিস্ট থাকতেও কেন অল্টারনেটিভ বইগুলো নিয়ে লিখলাম, সেটা বোধহয় একটা সিনেফিক্সের ভিডিও থেকে অনুপ্রাণিত। যাই হোক, এই সেম লিস্টটা আমি আইএমডিবিতেও দিয়েছি। অ্যামাজনেও, কিন্তু ওরা বোধ হয় এখনও বাংলা ফন্টে রিভিউ গ্রহণ করছে না। যাই হোক, এটাকে আবার ক্যানোনিক্যাল বলে ভেবে নেবেন না