"উল্টোদিক থেকেই [*] স্টার্ট করা যাক। বরফি। আমি জীবনে ভাবিনি সিনেমা রিভিউ লেখা এইটা থেকে শুরু করবো। অনুরাগ বসু আমার ফেভারিট ডিরেক্টর না। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া - অন্তত এখনও - ভালো লাগে না। রণবীর কাপুর তো পছন্দই নয়। তাও আমার ল্যাদ খাবার অভ্যেস কাটাতে এটা লেখা। যাইহোক, শুরু করা যাক। অনুরাগের লাস্ট সিনেমা দেখেছিলাম - মেট্রো। ব্যাপক। তারপরে এই। প্রথমে বেশ দারুণ লাগে। অসামান্য ডিরেকশন। কিন্তু সাথে সাথেই মনে হয় সিনেমাটার মধ্যে এতগুলো ফর্ম ইউজ করেছেন - তার মধ্যে কটা আবার আমাদের কাছে একেবারে নতুন - যে টেস্টি হতে বাধ্য। তারপরে বলবো, লিড ক্যারেক্টারগুলো, সবাই ভালো। তবে কী, একদম সাইলেন্ট সিনেমা না। এর থেকে ব্ল্যাক/খামোশি অনেক বেশি সাইলেন্ট ছিল। অতএব ওই জেনরে ভাবাই যাবে না। মুন্সিয়ানা এখানেই, ওই দুটো ক্লাসিকের সাথে তুলনা করার ইচ্ছে একেবারেই মনে আসে না। শুধু নায়কের বাবা যখন মরে যায়, তখন খামোশির কথা মনে পড়ে। আর এটা না বললেই নয়, ডিটেলিং অসাধারণ। প্যাকার্স এন্ড মুভার্স থেকে শুরু করে একজন বধিরের (এবং সেটা একটা অভ্যাসে পরিণত হওয়া) - সব আছে। ট্রেলার দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল গরীবের ছেলে, যতই পাহাড়ি জায়গায় থাকুক, এত হিরোমার্কা বডি কেন?! তারও লজিক দেওয়া হয়েছে। রণবীর কাপুর এমন একজন এক্টর যাকে গ্রূম করিয়ে ব্যাপক শেপ দেয়া যায় - পরিচালক প্রায় সফল বলা চলে। আবার তুলনা চলে আসে মনে, তবে আজব প্রেম../রাজনীতির মতো না। প্রিয়াঙ্কার বলা যেতে পারে সেই অ্যায়তরাজের পর থেকে, সেরা অভিনয়। সাত খুন মাফে যা ছড়িয়েছিলো, এখানে প্রায় বলা যায় ইন্টারেস্ট সমেত শোধ দিয়েছে। সৌরভ শুক্লা বাঙালি পুলিশ হিসেবে ব্যাপক। এটা অবশ্য কাস্টিং এর মজা। রূপা গাঙ্গুলি যেমন হন, অ্যাক্টিং বেশ ভালো। ওনার মুখে 'কুছ খা লে' কথাটা ওই মুহূর্তে অসাধারণ লেগেছিলো। হারাধনবাবু বড্ডো এক্সট্রিম, তাও ভালো। যীশু পেয়েছে একটা বালের রোল, কত আর ফুটিয়ে তুলবে। আর ইলিনা তো ব্যাপকই (দেখতে), সত্তরের নায়িকা হিসেবে বেশ মাধবীলতা কে মনে করিয়ে দেয়। তবে টিপটা আরেকটু নিচে পরালে ভালো হতো। সত্তর বলতে মনে পরে গেলো, একটু ভাবতে চাপ হয়, হঠাৎ ওই টাইমটা বাছা হলো কেন?! টাইমের তো কোনো এক্সট্রা সুবিধা তোলা হলো না। ইভেন একটা নকশাল আন্দোলন/জরুরি অবস্থা এর ইনস্ট্যান্স ও তুলে ধরা হয়নি। আমাকে একজন বলেছিলো যেহেতু সিনেমাটার অন্যতম উপাদান মানুষের ভালোত্ব, তাই বেশ কিছু দশক আগে যেতে হয়েছে। আমার বেশ মনে ধরেছে কথাটা। আরেকজন বলেছিলো ব্যবসার কথা। কাস্টিং এর আরেকটা দিক বলা যায়, লোকেশন ওয়াইজ কলকাতা মার্কেট, নায়িকা ওয়াইজ সাউথের মার্কেট আর রণবীর কাপুর তো রিসেন্ট হার্টথ্রব। ভালো ব্যাখ্যা। এবার কিছু দুর্বলতা - যেটা ফিল্ম সমালোচনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ - বলা যাক। অনুরাগ বসুর মতো ডিরেক্টর কলকাতাকে রিপ্রেজেন্ট করতে গিয়ে সেই স্টিরিওটাইপের বাবা হাওড়া ব্রিজ ইউজ করলেন কেন?! সেকেন্ড, দুটো গানের মধ্যে ('কিউ' আর 'ফির লে আয়া দিল') গ্যাপ খুব কম [†]। থার্ড, যীশুর ক্যারেক্টারতা এত দুর্বল কোনো - ছোট বলে বলছি না - কোনো জামাই তার শাশুড়ির সামনে বৌকে বাড়ির থেকে বেরিয়ে যেতে বলতে পারে?! ফোর্থ, রণবীর যখন বুড়ো সাজলো, তার মধ্যে টাটা ডোকোমোর বুড়োকে ছাড়া আর কিছু পেলাম না। নতুন অবতার না হোক, একটু ইম্প্রোভাইজ করলে ভালো হতো। পাঁচ, ওই জোনাকির সিনটা বড্ডো সঞ্জয় লীলা বনশালি টাইপ হয়ে গেছে। আর অনেক ধন্যবাদের মধ্যে দুটো না বললেই নয়। এক, সমসাময়িকতাকে ব্যবহার করার লোভ সম্বরণ করতে গাঁড় ফেটে যায়। সেইটা অনুরাগ করেছেন। আর প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার অসামান্য অভিনয়ের কথা তো বলাই হয়েছে। অভিনয়কে ভালোবেসে স্টারডমকে এইভাবে উত্তরণ করায় যায়, জাস্ট ভাবা যায় না। অটিজমের কথা মনে করলে মাই নেম ইজ খানের কথা মনে পড়ে, কিন্তু সে তুলনা অর্বাচীন। কারণ, দুটি চরিত্রের ফর্ম ও অ্যাম্বিয়েন্স ডেলিভারিগতভাবে আলাদা। সামারি এটাই, টুকরো টুকরো রশোমন, ক্লাইম্যাক্সে গন বেবি গন ফ্লেভার, আর স্টোরিলাইনে পাল্প ফিকশনের কাজিন হলেও রণবীর কাপুরের ভাষায় বলতে গেলে, একটা সাইন যেটা মানে <ওয়াহ>। আর মিউজিক তো বলাই হলো না। ভাবা যাচ্ছিলো না প্রীতমের মিউজিক। শেষে যখন গসিপ শোনা গেলো কে নাকি কি একটা লাইন না সুর চুরি করার জন্য 'আলা বরফি' গানটার বিরুদ্ধে কেস করবে, তখন নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো।"
__________
[*] একটা নোটপ্যাডের উল্টোদিক থেকে লিখছিলাম। সামনের দিকে অ্যান্ড্রয়েড এপিআইএর কিছু নোট ছিল
[†] এটা এখন আলাদাভাবে বলার মতো কিছু না। বাজে এডিটিংএর যুগে এ জিনিস নিউ নর্মাল
0 comments:
Post a Comment