"ভুলে যাওয়ার আগে কাহানির কথাও বলতে হয়। ওই বাইশে শ্রাবণ থেকে মনে আসলো। ঠিক ওই জেনরের গল্প। এতদিন যেটা চাওয়া হচ্ছিলো, সেই অসাধারণ গানপ্রয়োগ হয়েছে। এখানেও নওয়াজুদ্দিনকে দেখার মতো। এবং শোনার মতো। চরিত্রটির নাম অসাধারণ। পরমব্রত আস্তে আস্তে বেস গিটার হয়ে উঠছিল বাইশে.., এবং এই ছবিতে চেষ্টা করেছে বেসটাই যাতে লিড হয়ে ওঠে। যে চাপা অভিনয়ের জন্য পরমব্রত এত বিখ্যাত, সেটা সুন্দরভাবে ক্যারি করে যাচ্ছে। আর বিদ্যা বালনের এই রোলটা প্রায় গ্লাডিয়েটরে রাসেল ক্রোর মতো কষ্ট করে বানানো। মাঝে মাঝে দুয়েকটা লুজ দিলেও গল্পের স্বার্থে চেপে খেলা অনায়াসে হয় না। তারপরে আবার এত নতুন করে ভাবা একটা রোল। অনেকে সিনেমাটাকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির একটা সিনেমার সাথে তুলনা করেন (নাম মনে নেই) কিন্তু আমি ওটা দেখিনি। আমার বরং লেগেছে ইউজুয়াল সাসপেক্টের মতো। এবং অনেকটাই রাইটিয়াস কিল। তবে ভালো নকল। আমার একটা বন্ধু বলে 'ইন্টেলিজেন্ট কপি'। পাঁড় আঁতেলরা বলে 'ইন্সপায়ার্ড'। যেমন শোলে কিংবা কাঁটে। সে যাই হোক, গল্পে আসা যাক। বেশ ভালো সাসপেন্স থ্রিলার। আধুনিকতাকে বেশ সুন্দর করে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। এবং অ্যাক্টরদেরও। এবং ক্যামেরা। ক্যামেরার কথা একটু আলাদা করে বলতেই হবে কারণ এরা জলে ভেজা, রোদে পোড়া কলকাতাকে ঠিক ওইরকমভাবেই তুলে এনেছে। তবে যতটা নন-স্টিরিওটাইপ বলা হচ্ছিলো ততটা নয়। তবু আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমি তখন দক্ষিণের একটি শহরে পচছি। খাবারদাবার অলমোস্ট অসহ্য হয়ে উঠেছে (মালের চাটে যেগুলো আসে, সেগুলো ছাড়া অবশ্য :)), তখনই কাহানি এনে দিলো রাস্তার ধুলোয় দ্বিগুণ মোটা হয়ে যাওয়া চাউ, একসপ্তা পুরোনো তেলে ভাজা কচুরি। আহা, মন পুরো খারাপ হয়ে গেছিলো। আর কে না জানে, মন খারাপ হলো ভালো লাগারই একটা আইসোটোপ। যাই হোক, বাকি ব্যাপারগুলোতে আসি। এডিটিং আর কিছু না, শুধু ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের পুজোর এডিটিং দেখলে পুজোর ভিড়ের কথা মনে পরে যায়। কলকাতার ছেলেমেয়েরা বলছিলো - 'একদম হোমলি ফিল'। আমি অবশ্য চব্বিশ পরগনা থেকে, ট্রায়াঙ্গুলারও যা, ম্যাডক্স স্কোয়ারও তাই। ম্যাডক্স স্কোয়ারে অবশ্য সেইবার..... [*] কিছু করার নেই, কাহানি দেখে যা হয় তা হলো নস্টালজিয়ার বাবা। তারপর আবার তিনচারজন বাদে পুরো কাস্টিং টালিগঞ্জ থেকে তোলা। দুএক জায়গায় আবার ফ্যামিলিসুদ্ধ। আর সেইজন্যেই এই হোমলি ফিল। তবে হ্যাঁ, সিনেমাটাকে সর্বভারতীয় লেভেলে তোলার জন্য নওয়াজুদ্দিন ছাড়া যে চরিত্রটি এতো খাটাখাটনি করেছে, সেটা হলো শাশ্বতর। বাইরের বন্ধুরা সবাই শাশ্বতর নাম জিজ্ঞেস করছিল পর্যন্ত। শাশ্বতর অভিনয়ের তো তুলনা হয়ই না, তবে আরেকটা কথা বলবো, এরকম ক্যারেক্টার ভাগ্য করে পাওয়া যায়। এরকম স্ট্রং ভিলেন ক্যারেক্টার অনেকদিন আসেনি। সত্যি বলতে বলিউডে যারা স্ক্রিপ্ট লেখে, তাদের কাছেও হয়তো ভিলেনের স্টিরিওটাইপ চেঞ্জ করতে এই রোলটা সাহায্য করবে। তবে বলিউড ব্যাপারটাই যেভাবে স্টিরিওটাইপ হয়ে যাচ্ছে, বাঁচলে হয়। তারপরে শান্তিলাল। বেশ কুল। উচ্চারণ বাদে বেশ মেমোরি খাওয়া রোল। যদিও ননবেঙ্গলি দর্শক সিনেমার আধঘন্টা পরেই সিনেমাতে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করা বং অ্যাকসেন্ট মাফ করতে শুরু করবে। ধৃতিমান এবং দর্শিল, দুজনেই নিজের নিজের রোলে বেশ। বাকি থাকে ডায়লগ। সিনেমাতে ডায়লগ অনেকটাই বাংলা নির্ভর বা বাংলা নির্ভরতাকে খিল্লি করে বানানো হয়েছে। সেগুলোতে ফান, উইট, হিউমার, স্যাটায়ার - চারটেই যথেষ্ট। বাকি যেটুকু - সেটুকুর সিংহভাগ বলেছে নওয়াজ। নওয়াজের মোড অফ ডেলিভারি নিয়ে সন্দেহ নিয়ে থাকেনা এরপর। আর থানার বড়বাবুর রোলে খরাজ - ওকে ছাড়া আর কাউকে মানাতো না। তবে খরাজেরও এই একই টাইপের রোল থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ। আর একটা কথা বলা দরকার। পরিচালক এই যে নতুন বাঙালীয়ানাকে ইউজ করলেন, এটা দুইভাবে সিনেমাটার ক্ষতি করেছে। এক, সাসপেন্স থ্রিলারে নতুন, প্রান্তিক জিনিস নিয়ে মজা করতে করতে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। দুই, এই করতে গিয়ে নন-বেঙ্গলি মার্কেটটা ঠিক জয় করে ওঠা যায়নি। ব্যাস, এই ছাড়া প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ একটা সাসপেন্স থ্রিলার।"
__________
[*] এটাই এই বইটার ইউএসপি যে প্রচন্ড নস্টালজিন ক্ষরণ হয়
0 comments:
Post a Comment